‘সাংগঠনিকভাবে দেউলিয়া, তাই এজেন্ট নেই বিএনপির’

ছবি : সংগৃহীত

দল হিসেবে সাংগঠনিক সক্ষমতা হারানোর কারণে বিএনপির সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেনি মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়াম লীগ।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলেনে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এ কথা বলেন।

সিটি নির্বাচন নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলেনে তিনি বলেন, ‘আসলে ওনারা (বিএনপি) সাংগঠনিকভাবে দেউলিয়ায় পরিণত হয়েছে। সাংগঠনিক সক্ষমতা হারিয়েছে। এজন্য সব কেন্দ্রে হয়তো এজেন্ট দিতে পারে নাই। এখন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।’

ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন মিথ্যাচার দিয়ে দিন শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তিনি নিজে গোপীবাগ শহীদ শাহজাহান প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। সেই কেন্দ্রে তিনি যখন ভোট প্রদান করেন তখন তাদের পোলিং এজেন্ট ছিলো না। অথচ তারা বায়বীয় কায়দায় মিথ্যাচার করছে যে, বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে।’ 

ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন-ইভিএম থাকলে পোলিং এজেন্টের দরকার নেই মন্তব্য করেন তিনি বলেন, ‘ইভিএম এমন এক বিজ্ঞানসম্মত ভোট ব্যবস্থা যে, ইভিএম মেশিন থাকলে কোনো ধরনের কোনো পোলিং এজেন্টের দরকার নেই। কারণ ইভিএম মেশিন নিজেই পাহারা দেয়।’

‘অর্থাৎ বুড়ো আঙ্গুলের ছাপ না দেয়া পর্যন্ত কেউই ভোট দিতে পারবে না। কাজেই ইভিএম মেশিন একটি শক্তিশালী মেশিন। এই মেশিনই পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করে। ‘

নানক বলেন, ‘ভোটাররা শান্তিপূর্ণ ও স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিগত দিনগুলোতে আমরা দেখেছি জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে বিএনপি-জামাত ছিনিমিনি খেলেছে। যারা গণতন্ত্র ও জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে না তারা প্রযুক্তির বিপক্ষে কথা বলে। কারণ প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমেই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ক্ষমতায়নের পথ সুগম হয়। কেন্দ্র দখল করে, সিল পিটিয়ে একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার সুযোগ ইভিএমে নেই।’

নির্বাচনে সুন্দর পরিবেশ রয়েছে এবং বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া চমৎকার পরিবেশে ভোট পর্ব শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ‌্য দিয়ে ভোট হচ্ছে। আমারা অনুরোধ জানাবো ঢাকার সকল ভোটাররা যেন ভোট কেন্দ্রে আসে। তাদের সুচিন্তিত মতামত দিয়ে যেন তাদের মহানগরের পিতাকে নির্বাচিত করে।’

সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি কম-এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘শীতের সকাল, তারপর তিনদিনের ছুটি হওয়ার কারণে ভোটারদেরও এক ধরনের অলসতা তৈরি হয়েছে। তারা ভোট কেন্দ্রে একটু দেখেশুনেই আস্তে আস্তে যাচ্ছেন।’

‘এর ভেতরে কিছু ঘটনা তো ঘটেছে আপনারা জানেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন সকালে ভোট দিয়েই তিনি বলা শুরু করেছেন যে, ‘আমার যদি মরতে হয় মরবো, জীবন দেবো। যতকিছুই হোক কেন্দ্র পাহারা দেবো’, এই ধরনের দাঙ্গামূলক কথাবার্তা এবং বিএনপির আচরণ মানুষকে একটু ভাবিয়ে তুলেছে একথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে মানুষ এখন দেখছে যে শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। কাজেই ভোটাররা মাঠে নেমে যাবে বলে আশা করি। মহিলা ভোটাররা নেমে গেছে। মহিলা ভোটাররা যেহেতু নেমে গেছেন, পুরুষরা লজ্জায় হলেও নামবে’, বলেন তিনি।

বিদেশ কুটনীতিরদের তৎপরতা প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘কুটনীতিকদের স্বাভাবিক একটা শিষ্টাচার রয়েছে। তারা যা করেছে সেটি শিষ্টাচার বহির্ভূত। এই ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের ক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কুটনীতিক মিশনগুলো থেকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পাশপাশি দেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এটি পর্যবেক্ষক নিয়োগে আন্তর্জাতিক বিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরিরত বাংলাদেশিদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে মনোনীত করে কূটনৈতিক মিশনগুলো সঠিক কাজ করেনি।’

জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা করবে না বরং তা প্রতিহত করবে বলেও এ সময় মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃনাল কান্তি দাস, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নহারা লাইলী, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহেরাব আফরোজ চুমকি, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, দপ্তর বিপ্লব বড়ুয়াসহ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।